ইলেক্ট্রিক্যাল টেকনোলজি বিদ্যুৎ, ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রম্যাগনেটিজমের জ্ঞান ও প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে। আধুনিক সভ্যতার সকল উপকরণই প্রত্যক্ষ বা পরক্ষভাবে বিদ্যুৎ নির্ভর। বড় ধরনের বৈদ্যতিক ব্যববস্থাপনা যেমন- বৈদ্যতিক শক্তি উৎপাদন, পরিবহন, সরবরাহ, বৈদ্যতিক সার্কিট ডিজাইন, এস্টিমেটিং, বৈদ্যতিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন, নিয়ন্ত্রণ, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি ইলেক্ট্রিক্যাল টেকনোলজির অন্তভূক্ত।
ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ
ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হল একটি প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রোগ্রাম যেখানে শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক অধ্যায়নের পাশাপাশি পরীক্ষাগারে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বৈদ্যুতিক সার্কিট, ইলেকট্রনিক্স, পাওয়ার সিস্টেম, কন্ট্রোল সিস্টেম, ইন্সট্রুমেন্টেশন এবং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজমের মতো বিষয়গুলি ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্তভূক্ত।
ডিপ্লোম ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কেন পড়বেন?
একজন ডিপ্লোমা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন শিল্প যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদন, টেলিযোগাযোগ, ইলেকট্রনিক্স, উৎপাদন, নির্মাণ এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। আধুনিক শিল্পনির্ভর অর্থনীতিতে যে কয়েকটি পেশাকে সম্ভববনাময় ধরা হয় তার মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অন্যতম। কর্মক্ষেত্রে একজন ডিপ্লোমা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের পদবি হয়ঃ
- উপসহকারী প্রকৌশলী
- প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার
- সাইট ইঞ্জিনিয়ার
- জুনিয়ার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার
- এস্টিমেটর
ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব বা কাজঃ
একজন ডিপ্লোমা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নির্মাণ, উৎপাদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং টেলিযোগাযোগ সহ বিভিন্ন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের দায়িত্ব নির্দিষ্ট শিল্প এবং কাজের অবস্থানের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে, তবে সাধারণত, তারা বৈদ্যুতিক সিস্টেমের নকশা, উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সমস্যা সমাধানের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত থাকে। একজন ডিপ্লোমা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও দায়িত্ব রয়েছে:
১। নকশা এবং উন্নয়ন
- সার্কিট ডিজাইন: বৈদ্যুতিক সার্কিট তৈরি এবং পরীক্ষা করা, নিশ্চিত করা যে তারা প্রয়োজনীয় স্পেসিফিকেশন এবং মান পূরণ করে।
- সিস্টেম ডিজাইন: বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন, যেমন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন, কন্ট্রোল সিস্টেম এবং যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলির জন্য বৈদ্যুতিক সিস্টেমের বিকাশ এবং বাস্তবায়ন।
- CAD সফ্টওয়্যার ব্যবহার: বিস্তারিত বৈদ্যুতিক স্কিম্যাটিক্স এবং ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করতে কম্পিউটার-এডেড ডিজাইন (CAD) সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা।
২। ইনস্টলেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ
- সরঞ্জাম ইনস্টলেশন: বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং সিস্টেমের ইনস্টলেশন তত্ত্বাবধান করা, নিরাপত্তা মান এবং প্রবিধানের সাথে সম্মতি নিশ্চিত করা।
- রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামত: সর্বোত্তম কর্মক্ষমতা এবং দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং বৈদ্যুতিক সিস্টেম এবং সরঞ্জামের সমস্যা সমাধান করা।
- আপগ্রেড এবং পরিবর্তন: কার্যকারিতা এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য বিদ্যমান বৈদ্যুতিক সিস্টেমে আপগ্রেড এবং পরিবর্তনগুলি বাস্তবায়ন করা।
৩। পরীক্ষা এবং পরিদর্শন
- সিস্টেম টেস্টিং: বৈদ্যুতিক সিস্টেম এবং উপাদানগুলি সঠিকভাবে এবং নিরাপদে কাজ করছে তা নিশ্চিত করতে পরীক্ষা পরিচালনা করা।
- মান নিয়ন্ত্রণ: নিশ্চিত করা যে সমস্ত বৈদ্যুতিক ইনস্টলেশন এবং সিস্টেমগুলি শিল্পের মান এবং প্রকল্পের বৈশিষ্ট্যগুলি পূরণ করে।
- ত্রুটি নির্ণয়: বিভিন্ন পরীক্ষার যন্ত্র এবং কৌশল ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক সিস্টেমে ত্রুটি নির্ণয় করা।
৪। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা
- প্রকল্প পরিকল্পনা: বাজেট, সময়সূচী এবং সম্পদ বরাদ্দ সহ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পগুলির পরিকল্পনা এবং সমন্বয়ে সহায়তা করা।
- টিম সমন্বয়: প্রকল্পের লক্ষ্য এবং সময়সীমা পূরণ হয়েছে তা নিশ্চিত করতে অন্যান্য প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ এবং পেশাদারদের সাথে সহযোগিতা করা।
- ডকুমেন্টেশন: নকশা পরিবর্তন, পরীক্ষার ফলাফল এবং রক্ষণাবেক্ষণ লগ সহ সমস্ত ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ক্রিয়াকলাপের বিস্তারিত রেকর্ড বজায় রাখা।
৫। স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা
- সম্মতি: দুর্ঘটনা এবং আঘাত প্রতিরোধের জন্য সমস্ত বৈদ্যুতিক সিস্টেম এবং অনুশীলনগুলি স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা বিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করা।
- নিরাপত্তা প্রোটোকল: কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা প্রোটোকল এবং পদ্ধতিগুলি বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগ করা।
- প্রশিক্ষণ: কর্মচারী এবং কর্মীদের নিরাপদ হ্যান্ডলিং এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম এবং সিস্টেম পরিচালনার প্রশিক্ষণ প্রদান।
৬। গ্রাহক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা
- প্রযুক্তিগত সহায়তা: ক্লায়েন্ট, গ্রাহক এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং পরামর্শ প্রদান।
- গ্রাহক পরিষেবা: বৈদ্যুতিক সিস্টেম এবং পরিষেবা সম্পর্কিত গ্রাহকের প্রশ্ন এবং উদ্বেগের সমাধান করা।
- ডকুমেন্টেশন এবং রিপোর্টিং: ক্লায়েন্ট এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য প্রযুক্তিগত প্রতিবেদন, ম্যানুয়াল এবং ডকুমেন্টেশন প্রস্তুত করা।
৭। উদ্ভাবন এবং ক্রমাগত শিক্ষা
- গবেষণা এবং উন্নয়ন: বৈদ্যুতিক প্রকৌশল প্রযুক্তির সর্বশেষ অগ্রগতির সাথে আপডেট থাকা এবং অনুশীলনে নতুন কৌশল এবং সরঞ্জামগুলিকে একীভূত করা।
- ক্রমাগত উন্নতি: দক্ষতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য কোর্স, কর্মশালা এবং সেমিনারগুলির মাধ্যমে ক্রমাগত পেশাদার বিকাশে জড়িত হওয়া।
ডিপ্লোমা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কর্মক্ষেত্রঃ
চাকরির ক্ষেত্রঃ
- সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দফতর যেমন-ডেসকো, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ওয়াসা, গণপূর্ত অধিদপ্তর ইত্যাদি তে উপ-সহকারি প্রকৌশলী (ইলেক্ট্রিক্যাল) পদে ২য় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে চাকরির সুযোগ।
- সকল সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে জুনিয়ার ইন্সট্রাক্টর (ইলেক্ট্রিক্যাল) হিসাবে চাকরির সুযোগ।
- সকল টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে জুনিয়ার ইন্সট্রাক্টর (ইলেক্ট্রিক্যাল) হিসাবে চাকরির সুযোগ।
- বেসরকারি বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপনন প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরির সুযোগ।
- ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরির সুযোগ।
- বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরির সুযোগ।
আত্মকর্মসংস্থানঃ
- ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্য উৎপাদন ও বিপননের ব্যবসা করতে পারবে।
- বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রনালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, পল্লি বিদ্যুৎ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদার হিসাবে কাজ করতে পারবে।
- ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্য সামগ্রি আমদানি ও রফতানি ব্যবসা করতে পারবে।
- ব্যক্তিগতভাবে সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করতে পারবে।
- ইলেক্ট্রিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারবে।
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোথায় পড়বেন?
দেশের প্রায় সকল সরকারি ও বেসরকারি পলেটেকনিকে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির সুযোগ রয়েছে। কুষ্টিয়াতে দেশসেরা বেসরকারি ইন্সটিটিউট গুরুকুল-এ ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে।
গুরুকুলে কেন পড়বেন?
- বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী
- মাল্টিমিডিয়া শ্রেণী কক্ষ
- যুগোপযোগী আধুনিক ব্যবহারিক ল্যাবরেটরি
- বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাথে ইর্ন্টার্ণি ও কর্মসংস্থানের চুক্তি
- দেশি বিদেশী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে কোলাবোরেশন
- একাডেমিক শিক্ষা পাশাপাশি রোভাট স্কাউটিং, ডিবেটিং, ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা
- নিয়মিত অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ
ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির যোগ্যতাঃ
এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় পাসকৃতরা ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি হতে পারেন। নূন্যতম জিপিএ ২.০০। এ ক্ষেত্রে বয়স এবং এসএসসি পাসের বছরের কোন সীমাবদ্ধতা নেই।
গুরুকুলে ভর্তির জন্য যোগাযোগঃ
৫/১, জেহের আলী সড়ক, কালিশংকরপুর, কুষ্টিয়া। মোবাইলঃ ০১৭০১-২২৯৬২১, ০১৭০১-২২৯৬২২
উচ্চ শিক্ষা সুযোগঃ
বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট সহ বাংলাদেশের অধিকাংশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি বিএসসি ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) পড়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দেশের প্রায় সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সরাসরি বিএসসি ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ভালো গ্রেড পয়েন্ট সহ পাশ করতে হবে। ডিপ্লোমা ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশকৃতদের জন্য সরকারি ডুয়েট সহ দেশের প্র্রায় সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ইউরোপ, অ্যামেরিকা, জাপান, চীন সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপ সহ বিএসসি ইন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: