বর্তমান বিশ্বে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি শুধু সৃজনশীল শিল্প নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ পেশাগত খাত। বিজ্ঞাপন, গণমাধ্যম, ডিজিটাল কনটেন্ট, অ্যানিমেশন, গেম ডিজাইন, চলচ্চিত্র ও ওয়েবভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের উন্নয়নের সাথে সাথে এই খাতের চাহিদা দিন দিন বহুগুণে বাড়ছে। এ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB) ডিপ্লোমা ইন গ্রাফিক্স আর্টস/মাল্টিমিডিয়া টেকনোলজি কোর্স চালু করেছে, যা সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে তরুণদের আধুনিক দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলছে।
ডিপ্লোমা ইন গ্রাফিক্স আর্টস/মাল্টিমিডিয়া টেকনোলজি
কোর্সের উদ্দেশ্য
ডিপ্লোমা ইন গ্রাফিক্স আর্টস/মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো—
- শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ধারণাকে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশের দক্ষতা অর্জন করানো।
- বিজ্ঞাপন, মিডিয়া ও আইটি শিল্পে প্রয়োজনীয় পেশাগত গ্রাফিক্স ও মাল্টিমিডিয়া স্কিল তৈরি করা।
- মাল্টিমিডিয়া প্রোডাকশন, অ্যানিমেশন, ফটোগ্রাফি ও ভিডিও এডিটিংয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান।
- ফ্রিল্যান্সিং ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ তৈরি করা।
- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার মতো দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা।
পাঠ্যক্রমের কাঠামো
চার বছর মেয়াদী এই ডিপ্লোমা প্রোগ্রামটি সাধারণত ৮টি সেমিস্টারে বিভক্ত। প্রতিটি সেমিস্টারে তাত্ত্বিক পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি ব্যবহারিক ক্লাস ও প্রজেক্ট ওয়ার্ক রাখা হয়।
প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টার: মৌলিক জ্ঞান
- Drawing & Colour Theory
- Computer Fundamentals
- Typography & Page Layout
- Photography Basics
- Communication Skills
তৃতীয় ও চতুর্থ সেমিস্টার: গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রয়োগ
- Adobe Photoshop, Illustrator
- CorelDRAW & InDesign
- Digital Illustration & Logo Design
- Printing Technology
- Packaging Design
পঞ্চম ও ষষ্ঠ সেমিস্টার: মাল্টিমিডিয়া টেকনোলজি
- Animation (2D & 3D)
- Audio-Visual Editing (Premiere Pro, After Effects)
- Multimedia Authoring Tools
- Web & Interactive Design
- Motion Graphics
সপ্তম ও অষ্টম সেমিস্টার: পেশাগত প্রয়োগ
- Visual Communication & Branding
- UI/UX Design
- Film & Media Production
- Portfolio Development
- Industrial Training & Internship
️ শেখানো হয় যে সব দক্ষতা
- গ্রাফিক্স ডিজাইন ও লেআউট প্ল্যানিং
- ডিজিটাল পেইন্টিং ও ইলাস্ট্রেশন
- অ্যানিমেশন (2D/3D) ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস
- অডিও ও ভিডিও প্রোডাকশন
- ওয়েব ও মোবাইল ইন্টারফেস ডিজাইন
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR)-এর প্রাথমিক ধারণা
- ব্র্যান্ডিং ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট প্রোডাকশন
কর্মক্ষেত্র ও সম্ভাবনা
ডিপ্লোমা ইন গ্রাফিক্স আর্টস/মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তির শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ পায়।
চাকরির ক্ষেত্রসমূহ:
- বিজ্ঞাপন সংস্থা (Advertising Agency)
- প্রিন্টিং ও পাবলিশিং হাউজ
- টেলিভিশন ও মিডিয়া প্রোডাকশন হাউজ
- ওয়েব ও সফটওয়্যার কোম্পানি
- গেম ও অ্যানিমেশন স্টুডিও
- ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি
- ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম
- সরকারি-বেসরকারি তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ
ফ্রিল্যান্সিং সুযোগ
Fiverr, Upwork, Freelancer.com, 99designs প্রভৃতি মার্কেটপ্লেসে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, অ্যানিমেশন ও UI/UX ডিজাইনের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। এ কোর্সের শিক্ষার্থীরা সহজেই আন্তর্জাতিক বাজারে কাজের সুযোগ পেতে পারে।
ক্যারিয়ার উন্নয়ন ও উচ্চশিক্ষা
ডিপ্লোমা শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা—
- বিএসসি ইন মাল্টিমিডিয়া অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি
- বিএসসি ইন গ্রাফিক্স ডিজাইন অ্যান্ড ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশন
- বিএসসি ইন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (Bridge Program এর মাধ্যমে)
- বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানিমেশন বা ফিল্ম প্রোডাকশন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের “ডিজিটাল বাংলাদেশ” ভিশন এবং স্টার্টআপ কালচারের প্রসারের ফলে গ্রাফিক্স ও মাল্টিমিডিয়া টেকনোলজির গুরুত্ব বহুগুণে বেড়েছে। স্থানীয়ভাবে ই-লার্নিং, ই-কমার্স ও ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরেও এ পেশার গুরুত্ব বাড়ছে।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা ইন গ্রাফিক্স আর্টস/মাল্টিমিডিয়া টেকনোলজি কোর্স কেবল একটি শিক্ষাক্রম নয়, বরং ভবিষ্যতের চাকরি ও উদ্যোক্তা বাজারের অন্যতম শক্তিশালী প্রস্তুতি। সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে এ কোর্স তরুণদেরকে শুধু চাকরিজীবী নয়, বরং বিশ্বমানের ফ্রিল্যান্সার, উদ্যোক্তা ও সৃজনশীল পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।