ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ, বাকাশিবো

বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। নদী, খাল, বিল, হাওর-বাওড় ও সমুদ্রসীমা মিলিয়ে বাংলাদেশের জলজ সম্পদ অত্যন্ত সমৃদ্ধ। মৎস্য খাত দেশের জিডিপির একটি উল্লেখযোগ্য অংশে অবদান রাখে এবং দেশের প্রোটিন চাহিদার প্রায় ৬০% আসে মাছ থেকে। ফলে মৎস্য উৎপাদন, চাষাবাদ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB) অনুমোদিত ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ প্রোগ্রাম একটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকোর্স, যা তরুণদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের মৎস্য খাতকে আরও এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে।

 

ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ

 

কোর্সের কাঠামো মেয়াদ

  • কোর্সের নাম: ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ
  • মেয়াদ: বছর ( সেমিস্টার)
  • নিয়ন্ত্রক সংস্থা: বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB)
  • ভর্তির যোগ্যতা: এসএসসি (বিজ্ঞান, বাণিজ্য বা মানবিক যেকোনো শাখা) পাশ, তবে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পায়।

 

পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু

ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ একটি সমন্বিত কোর্স যেখানে মৌলিক বিজ্ঞান, প্রয়োগকৌশল এবং মৎস্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত।

প্রথম দুই বছর (মৌলিক জ্ঞান):

  • বাংলা, ইংরেজি ও গণিত
  • কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন
  • জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা
  • বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রইং

তৃতীয় চতুর্থ বছর (প্রযুক্তিগত ব্যবহারিক বিষয়):

  • ফিশ ট্যাক্সোনমি ও বায়োলজি
  • ফিশ প্যাথলজি ও ফিশ হেলথ ম্যানেজমেন্ট
  • অ্যাকুয়াকালচার ও হ্যাচারি টেকনোলজি
  • ফিশ নিউট্রিশন ও ফিড টেকনোলজি
  • ফিশ জেনেটিক্স ও ব্রিডিং টেকনোলজি
  • ফিশ প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও কোল্ড চেইন ম্যানেজমেন্ট
  • ইকোলজি ও ওয়াটার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট
  • ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট ও নীতি
  • সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ও চাষ পদ্ধতি
  • শিল্প প্রশিক্ষণ (Industrial Training)

 

ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ

ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, বরং প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের—

  • মাছের হ্যাচারি ও পুকুরে চাষের হাতে-কলমে কাজ
  • ফিশ ফিড তৈরির ল্যাব ট্রেনিং
  • প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ভিজিট
  • সরকারি ও বেসরকারি ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ
  • ফিল্ড ট্রেনিং ও ইন্টার্নশিপ

এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে এবং কর্মক্ষেত্রে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

 

ক্যারিয়ার সুযোগ

ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ পাশ করার পর শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে বিস্তৃত কর্মক্ষেত্র রয়েছে।

সরকারি খাত:

  • মৎস্য অধিদপ্তর (Department of Fisheries)
  • মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট
  • কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর
  • বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প

বেসরকারি খাত:

  • মাছের হ্যাচারি, ফিড মিল ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা
  • বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান
  • এনজিও পরিচালিত মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প
  • সুপার শপ ও রপ্তানি-ভিত্তিক ফিশ প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি

উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ:

শিক্ষার্থীরা চাইলে নিজের হ্যাচারি, ফিশ ফিড প্রজেক্ট, কিংবা মাছের প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসা শুরু করতে পারে। এতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে মাছের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়।

 

উচ্চশিক্ষার সুযোগ

ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা ল্যাটারাল এন্ট্রি মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিএসসি ইন ফিশারিজ বা বিএসসি ইন অ্যাকুয়াকালচার প্রোগ্রামে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে। দেশে মৎস্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পড়ানো হয় যেমন—

  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ)
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
  • শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

এছাড়া বিদেশেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব

বাংলাদেশে মৎস্য খাত দেশের রপ্তানি আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস। চিংড়ি, কাতলা, রুই, তেলাপিয়া, পাঙ্গাসসহ নানা প্রজাতির মাছ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রাখে।

ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ শিক্ষার্থীরা—

  • মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি
  • চাষ পদ্ধতিতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ
  • ফিশ ফিড ও প্রক্রিয়াজাতকরণ উন্নয়ন
  • মৎস্য রোগ নিয়ন্ত্রণ
  • রপ্তানি-যোগ্য মান বজায় রাখা

এসব ক্ষেত্রে অবদান রেখে দেশের অর্থনীতি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।

 

Logo Gurukul Dodger Blue ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ, বাকাশিবো

 

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ কোর্স কেবল একটি শিক্ষাকোর্স নয়; এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি, খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসংস্থানের একটি সম্ভাবনাময় পথ। দেশের তরুণদের এই কোর্সে যুক্ত করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা গেলে মৎস্য খাতের উৎপাদনশীলতা ও রপ্তানি আয় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

এভাবে ডিপ্লোমা ইন ফিশারিজ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দক্ষ, কর্মঠ আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।