আধুনিক বিশ্বে শিল্প, ব্যবসা ও গৃহস্থালী জীবনে রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনিং (RAC) প্রযুক্তির গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্য সংরক্ষণ থেকে শুরু করে চিকিৎসা, বাণিজ্য, পরিবহন, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, আইটি ডাটা সেন্টার কিংবা ঘরোয়া জীবন—সবখানেই শীতলীকরণ প্রযুক্তি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই খাতে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
এই প্রয়োজন পূরণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB) পরিচালিত চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনিং প্রযুক্তি কোর্সটি শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ করে দিচ্ছে।
ডিপ্লোমা ইন রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনিং প্রযুক্তি
কোর্সের কাঠামো
BTEB অনুমোদিত ডিপ্লোমা ইন RAC কোর্সটি চার বছর মেয়াদি, যা মোট আটটি সেমিস্টারে বিভক্ত।
প্রতি সেমিস্টারের সময়কাল ছয় মাস।
১ম ও ২য় সেমিস্টারে মৌলিক বিজ্ঞান, গণিত, কম্পিউটার ও মৌলিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় পড়ানো হয়।
৩য় থেকে ৮ম সেমিস্টারে রেফ্রিজারেশন, এয়ারকন্ডিশনিং, কুলিং সিস্টেম, ইনস্টলেশন, মেইনটেন্যান্স, ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রোল ও উন্নত প্রযুক্তি শেখানো হয়।
কোর্স শেষে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট বা ইন্টার্নশিপ থাকে, যেখানে শিক্ষার্থীরা বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
পাঠ্যসূচির প্রধান বিষয়সমূহ
১. Refrigeration Principles & Systems – ভেপার কম্প্রেশন, ভেপার অ্যাবসার্পশন, রেফ্রিজারেন্ট ও কুলিং সাইকেল।
২. Air Conditioning Systems – সেন্ট্রাল AC, স্প্লিট AC, VRF/VRV সিস্টেম, ডাক্ট ডিজাইন।
৩. Heat Transfer & Thermodynamics – কন্ডাকশন, কনভেকশন, রেডিয়েশন ও সাইকোমেট্রিক চার্ট ব্যবহার।
৪. Electrical & Electronics for RAC – কন্ট্রোল সার্কিট, সেন্সর, মাইক্রোকন্ট্রোলার ও অটোমেশন।
৫. Workshop Practice – ব্রেজিং, ওয়েল্ডিং, পাইপ ফিটিং, গ্যাস চার্জিং ও লিক টেস্টিং।
৬. Energy Efficiency & Green Technology – পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার, শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি।
৭. Troubleshooting & Maintenance – AC ও ফ্রিজের সাধারণ সমস্যা সমাধান, প্রতিরোধমূলক মেইনটেন্যান্স।
৮. Project & Industrial Training – চূড়ান্ত বর্ষে প্রজেক্ট ও বাস্তব ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রশিক্ষণ।
ভর্তি যোগ্যতা
এসএসসি (বিজ্ঞান, ব্যবসা, মানবিক) পাস শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে।
ন্যূনতম জিপিএ ২.০০ থাকতে হবে।
ভর্তির প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পায়।
ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
ডিপ্লোমা ইন RAC প্রযুক্তি সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক।
ঘরোয়া ও বাণিজ্যিক খাতে: ফ্রিজ, ডিপ ফ্রিজ, এসি, কোল্ড স্টোরেজ রক্ষণাবেক্ষণ।
শিল্প ও উৎপাদন খাতে: টেক্সটাইল মিল, গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যাল, ফুড প্রসেসিং কারখানায় কুলিং সিস্টেম।
চিকিৎসা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান: হাসপাতালের কোল্ড চেইন, ল্যাবরেটরি রেফ্রিজারেশন।
আইটি ও টেলিযোগাযোগ খাত: ডাটা সেন্টার কুলিং সিস্টেম।
বিদেশে কর্মসংস্থান: মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই খাতে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
বেতন ও সুযোগ-সুবিধা
দেশে নতুন শিক্ষার্থীরা মাসে ১৫,০০০–২৫,000 টাকা আয় করতে পারে।
অভিজ্ঞ ও দক্ষ টেকনিশিয়ানরা মাসে ৪০,০০০–৬০,000 টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন।
বিদেশে এই ডিপ্লোমাধারীরা মাসে ৮০০–১৫০০ মার্কিন ডলার আয় করতে সক্ষম।
কেন এই কোর্সটি পড়বেন?
✅ বিশ্বব্যাপী চাহিদা রয়েছে।
✅ হাতে-কলমে বাস্তব প্রশিক্ষণ।
✅ কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ।
✅ সরকারি স্বীকৃত ডিপ্লোমা।
✅ স্বনির্ভর হয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ।

ডিপ্লোমা ইন রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশনিং প্রযুক্তি হচ্ছে এমন একটি শিক্ষাক্রম, যা শিক্ষার্থীদের শুধু চাকরির উপযোগীই করে না, বরং স্বনির্ভর উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথও প্রশস্ত করে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে চাহিদার কারণে এই প্রযুক্তির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। তাই যারা একটি ক্যারিয়ারমুখী, প্রযুক্তিনির্ভর এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পেশা গড়তে চান, তাদের জন্য এই কোর্স একটি উত্তম পছন্দ।